শ্রীরাম কথা - JEWEL AICH ARKO

Tuesday, July 18, 2023

শ্রীরাম কথা



রাম অর্থাৎ তিনি আনন্দ প্রদান করেন। তিনিই পরম ভোক্তা, কিন্তু যখন আমরা সেই পরম ভোক্তা পরমেশ্বর ভগবানের সেবায় নিযুক্ত হই, তখন শুধু তিনিই নন, আমরাও পরম আনন্দে নিমগ্ন হই।

রাম হলো সবার আত্মা সীতা আমাদের হৃদয়


রাবন হলো তোমার মন যা আত্মা হতে তোমার হৃদয় হরণ করেছে। লক্ষন হল সবার বিবেক যা সবসময় তোমার সাথে থাকে। হনুমান হলো তোমার অনুমান এবং সাহস যা তোমার আত্মাকে সজাগ করার জন্য তোমার হৃদয়কে পূর্ণ উদ্ধার করে।


অনেক খুজে বড় ভ্রাতাকে পেয়ে ভরত শ্রীরামের পাতার কুটিরের সামনে এলেন। ভরতকে দেখেই শ্রীরামের চোখে জল আসে। ভরত অভিমানে বললেন,

“মেয়েদের বুদ্ধি কম, এটা কি আপনি জানেন না? তাদের কথায় আপনি কেন রাজ্য ছেড়ে এলেন।”

শ্রীরাম বললেন,


আমি রাজ্য ছেড়েছি বাবার জন্য।তিনি যা কথা দিয়েছেন, আমার প্রতি দুর্বলতায় যদি সেই কথা তিনি না রাখেন অযোধ্যার অপমান হত। সিংহাসন সামলানো সহজ কথা না।

ভরত জানালেন যে সেই সত্য রক্ষায় বাবা যে অনেক কষ্ট পেলেন। এই বয়সে এত কষ্ট হলে কি আর কেউ বাঁচে? হয়ত সেই কারনেই তিনি সাত দিনের মাথায় মারা গেলেন।



শ্রীরাম বাবার মৃত্যু খবর পেয়ে কাঁদতে লাগলেন।

ভরত বললেন, 

মরার কালে বাবার পাশে কোনও ছেলে ছিল না। তার দেহ তেলে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল। আমি মামাবাড়ি থেকে ফিরে অন্তেষ্টি করেছি। কিন্তু আপনি বড় ছেলে, আপনার কর্তব্য আছে।

তখন বশিষ্ট মুনির বিধানে চিত্রকূটের সব মুনিদের নেমন্তন্ন করে ফল্গু নদীর ধারে আবার দশরথের শ্রাদ্ধ করল রাম। ভরত টাকা পয়সা এনেছিল এই কারনেই।



এরপর দুই ভাই রাজনৈতিক আলোচনায় বসলেন। শ্রীরাম ফিরে যেতে পারবে না। রাজা হয়ে সে ঘোষণা করেছে একবার, কিন্তু ভরতও রাজা হলে লোকে মানবে না। তখন রামই বুদ্ধি বার করলেন যে ভাই তুমি এক কাজ কর পাশেই নন্দীগ্রাম, সেখানে নতুন রাজধানী করো, করে দেশ চালাও।

ভরত বললেন


ঠিক আছে, তোমার প্রতিক হিসাবে তোমার পাদুকা থাকবে অযোধ্যার সিংহাসনে।লোকে জানবে তুমিই রাজা, তাহলে আর সমস্যা হবে না।

ভরত রাজ্যে ফিরে স্বর্গের বিশ্বকর্মার মত শ্রেষ্ঠ কারিগরকে দিয়ে সুন্দর করে নতুন রাজধানী বানালেন নন্দীগ্রামে। এবার কৌশল্যা ও কৈকেয়ী দুজনেই রাজমাতা হল। মহিলামহলের সমস্যা মিটল।



চিত্রকূটে সুন্দর পরিবেশে শ্রীরাম থাকেন। মুনিরা আছে চারিদিকে। এক বছর কেটে গেল সেখানে। দশরথের মৃত্যুর বর্ষপালন অনুষ্ঠান করা দরকার। রাম গেল সেই সব খোঁজ খবর নিতে। সীতা ফল্গুনদীর তীরে বালি নিয়ে খেলা করছে। পাশেই তুলসী গাছ। এক ব্রাহ্মণকে সাক্ষী রেখে সীতা নিজেই বালি দিয়ে প্রায় নিখরচায় দশরথের শ্রাদ্ধ করে ফেললেন। রাম ফিরলে সীতা জানালেন, যে শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে, দশরথের আত্মা এসে পিণ্ড নিয়ে গেছে। কাজেই আর কোনও আয়োজন দরকার নাই।

শ্রীরামের এই কথা বিশ্বাস হয় না। তখন সীতা ব্রাহ্মণকে সাক্ষী মানে। ব্রাহ্মন পালটি খেয়ে জানায় সে এসব কিছুই জানে না। কবে সীতা শ্রাদ্ধ করল, কবে তা দশরথ নিল—সে এসব দেখেনি।



তখন সীতা তুলসীকে আর ফল্গু নদীকেও সাক্ষী মানে কিন্তু তারাও ব্রাহ্মণের পক্ষে দাঁড়ালো, কেউই এসব জানে না, রামের আবার শ্রাদ্ধ করা উচিত। বটগাছ এসে তখন রামকে বলে,


তুমি নিজেকে প্রশ্ন করো রাম। নিজেই ঠিক করে ভাবো কাকে বিশ্বাস করা উচিত তোমার। কে তোমার প্রকৃত কাছের লোক?



কল্পবৃক্ষ বটবৃক্ষের কথায় রাম মেনে নিলেন যে সীতার শ্রাদ্ধ বৈধ। সীতা ব্রাহ্মণকে অভিশাপ দেয় যে, তুমি সমাজের মাথা হয়ে আছ ঠিকই কিন্তু জানবে তোমার কষ্ট যাবে না। চিরকাল ব্রাহ্মণ জাত ভিখারি হয়ে থাকবে এই পৃথিবীতে।

তুলসীকে সীতা অভিশাপ দেয় যে সে ছোট ঝোপ হয়ে থাকবে, আর যত শেয়াল-কুকুর তাকে দেখেই প্রস্রাব করবে তার গায়ে।



আর ফল্গু নদীকে অভিশাপ দিল যে ফল্গু বালিচাপা পড়বে। লোকে জানবেও না যে নীচে ফল্গু নদী আছে , সবাই এমনকি পশুরাও তার বুকের ওপর দিয়ে হেঁটে যাবে।

রাম-লক্ষ্মন-সীতা চিত্রকূটে ভালোই ছিলেন। অনেক প্রতিবেশী। কিছুদিন পরে চিত্রকূটে খড় ও দূষণ নামে রাক্ষসদের অত্যাচার বাড়ল। তারা লঙ্কার রাজা রাবণের আত্মীয়।



মুনিরা ভয়ে সিদ্ধান্ত নিল সেই পাহাড়ী গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করবে। তারা এসে রামকে জানাল, তারা চলে যাবে রাক্ষসের ভয়ে।

রামও ঠিক করলেন আরও দক্ষিনে রওনা দেবে। মুনিরা না থাকলে সীতার নিরাপত্তা থাকবে না। তাছাড়া অনেক বছর পেরিয়েই গেল এভাবে। দেশ যা দেখার দেখে নিতে হবে। সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে আসমুদ্র হিমাচল সবার সঙ্গে। নানা মুনির কাছে নানা অস্ত্র পেয়ে ইতিমধ্যেই রাম শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন অনেক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যতদূর যাওয়া যায়, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়,দেশ দেখা যায় ততই ভালো।



চিত্রকূট পাহাড় থেকে তারা এল গয়ায়। সেখানে এসে জানা গেল পিতৃপুরুষের পিণ্ডদান করতে হয় গয়ায়। সীতা জানতে চায় রামের কাছে, এই জায়গাটায়ই কেন পিণ্ডদান করা হয়? শ্রাদ্ধ তো আগেই সবাই করে।

রাম জানালেন গয়ায় গয়াসুর নামে এক মহাবীর রাক্ষস বাস করত। সে বার বার অশ্বমেধ ইত্যাদি যজ্ঞ করে স্বর্গ-মর্ত্য জয় করে ফেলেছিল। দেবতারা ভয় পেয়ে ব্রহ্মার কাছে আর্জি জানায় গয়াসুরকে মারতে হবে নইলে সে সব দখল নেবে। ব্রহ্মা এসে গয়াসুরকে বলে তোমার দেহের উপরে যজ্ঞ হবে, এটাই আদেশ। ব্রহ্মাকে গয়া শ্রদ্ধা করত, সে আত্মবিশ্বাসীও ছিল, গয়াসুর মেনে নেয়।



সমস্ত মাল পত্র নিয়ে তার দেহ ঢেকে, অনেক ঘি ঢেলে আগুন জ্বেলে যজ্ঞ হওয়ার পরে সকলে গয়াসুরের মৃত্যুর জন্য আনন্দ করছে কিন্তু গয়াসুর যজ্ঞশেষে উঠে দাঁড়ল। তখন আর উপায় নেই দেবতাদের বাঁচানোর দেখে ব্রহ্মা তাকে মাথায় পা দিয়ে মেরে ফেলল।

কিন্তু সেই গয়াসুরের নামে জায়গাটার নামকরন করল আর ব্রহ্মার বরে সব লোককে একবার অন্তত এই গয়াসুরের দেশে আসতেই হয় বাবা-মা এর পিণ্ড দিতে ও জানতে হয় গয়াসুরের নাম।



গয়ায় এসে পিণ্ডদান না করলে কোনও আত্মার মুক্তি নেই অর্থাৎ গয়া বিখ্যাত হয়ে গেল মৃত্যুর বা জীবনের বদলে।

তারপর শ্রীরাম ও লক্ষ্মণ গয়ায় পিণ্ডদান করল মৃতপিতা দশরথ রাজার আত্মার সদগতির জন্য।

No comments: