আমি যেভাবে জ্ঞানপাপী হিন্দু হওয়া থেকে বাঁচলাম - জুয়েল আইচ অর্ক - JEWEL AICH ARKO

Sunday, December 26, 2021

আমি যেভাবে জ্ঞানপাপী হিন্দু হওয়া থেকে বাঁচলাম - জুয়েল আইচ অর্ক

 

 

 

আমি যেভাবে জ্ঞানপাপী হিন্দু হওয়া থেকে বাঁচলাম (Jewel Aich Arko) জুয়েল আইচ অর্ক

আমার বয়স যখন ৫ থেকে ১৫ বছর, যখন আমার অন্য ধর্মীয় বন্ধুরা সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতো তখন আমি সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নাচ,গান,আর্ট স্কুলে দৌড়াই,আমি শিল্পকলায়,স্কুলে নাচি আর গান গাই।আমার বয়স যখন ১৬ থেকে ২৫ বছর, তখন আমি অন্যান্য ধর্মীয় বন্ধুদের কাছ থেকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হই,
 
হিন্দুরা কেন মূর্তিপূজা করে?
মূর্তি খায় না,মশা মাছি তাড়াতে পারে না,এ আবার কেমন সৃষ্টিকর্তা?
হিন্দুরা কেন মৃতদেহ জ্বালিয়ে ফেলে?
বেদে,গীতায় নাকি মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ!!
উত্তরায়ন বেদে,অল্লোপনিষদে নাকি আল্লাহর,নবীর কথা বলা আছে!!
হিন্দুরা কেন গরু খায় না?
হিন্দুদের জীবনের মূল লক্ষ্য কি?
আমি তাদের উত্তর দিতে পারিনা !
কারণ,আমি কোনদিন কোন ধর্ম বই পড়িনি !গীতা,বেদ,উপনিষদ পড়িনি !
আমার মা সবসময় স্কুলের বই পড়াতেন আর বলতেন,
"ভালো রেজাল্ট করতে হবে!A + পেতে হবে! ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে!বেশী টাকা আয় করতে হবে!!যেখানে টাকা নেই,লাভ নেই সেখানে আমার মা বাবা যেতে দিতেন না!বেদ,গীতা
,উপনিষদ পড়লে পরীক্ষায় A+ পাবো না,
A+ না পেলে ভালো চাকরী,টাকা পাবো না তাই ওগুলো পড়ে সময় নষ্ট!"
এই লাভ লোকসানের হিসাবটা আমাদের বংশের ধারা, আমার দাদু ঠাকুমাও আমার বাবাকে লাভ,লোকসানের হিসাব ভালোই শিখিয়েছিলেন।
তাই,বুড়ো বাবা মা ঘরে রাখলে লাভ হবেনা,অযথা খরচ ভেবে আমার বাবা উনাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছেন!
তো আমি প্রশ্নের উত্তর গুলো খুঁজতে,
পুরোহিতের কাছে গেলাম,
উনি হু!!!!হা!!!!!এএএএএ!!!! বলে চলে গেলেন!!
কারণ,উত্তরগুলো উনিও জানেন না।উনার কাছে ধর্মবই মানে পুরোহিত দর্পণ, পঞ্জিকা।যেগুলো দিয়ে পেটপুঁজি চলে।বোকা হিন্দুগুলোর এটাই ইচ্ছা,মন্ত্রের অর্থ না জানলেও চলবে,পুরোহিতের পেছনে বসে মন্ত্রপাঠই কেবল ধর্ম!
আমার বাবা মার গুরু আসলে উনার কাছে গেলাম,উনি তার শিষ্যদের কোন জ্ঞান না দিলেও নিজের এঁটো খাওয়ানোর জন্য থালা আনতে ডাকছেন।গুরুকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে উনি বললেন,"কলিযুগে নামই সব।এত জানার দরকার নেই!"
আমি গেলাম কীর্তন আসরে, কীর্তনে কৃষ্ণ লীলা বলতে শুধু জটিলা, কুটিলা, বড়াই,রাধা,যমুনা !!অথচ কৃষ্ণের জীবনের মূল ছিলো গীতা,মহাভারত, ভাগবত,মুক্তি, মোক্ষলাভ! সেখান থেকেও আমি হতাশ হয়ে ফিরে এলাম! আমি গেলাম পূজায়,
পাড়ার ছেলেমেয়েদের উদ্যম নাচ,Dj গান আর মাতলামির ধাক্কাধাক্কিতে আমি ঠাকুর মশাই অবধি যেতেও পারলাম না।
হতাশ হয়ে গীতা,বেদ,উপনিষদ কিনে পড়া শুরু করলাম।
 
আমি জানলাম,
মূর্তি ভগবান না!!!!!!! এটি কাঠ,মাটি দিয়ে তৈরী একটা উদাহরণ মাত্র!!
তাই,মূর্তি খায় না,মূর্তিতে মশা মাছি বসতে পারে,মূর্তি ভেঙ্গে অনেক মূর্খ ভাবে হিন্দুদের সৃষ্টিকর্তাকে ভেঙেছি।
মূর্তি হিন্দুদের সৃষ্টিকর্তাও না!!!!!!
মূর্তি হলো সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অসংখ্য রূপের একটি রূপক মাত্র,যেটা কেবলমাত্র একটা চিহ্ন।যেটার মাধ্যমের ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি প্রকাশ করা হয় মাত্র।ভক্তের ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি প্রকাশের একটা মাধ্যম।
হিন্দু শাস্ত্র মতে ঈশ্বরের নিরাকার, সাকার দুই রূপেই বিরাজিত।ঈশ্বরের সাকার রূপ হলো দেবদেবী আর নিরাকার রূপ হলো আকৃতিবিহীন।বর্তমান যুগে আমাদের অশান্ত মনকে শান্ত করতে একটা মাধ্যম প্রয়োজন হয়,তাই মূর্তিকে মাধ্যম হিসেবে ধরলে ঈশ্বর আরাধনা সহজ হয়।
আমরা যখন প্রার্থনায় বসি তখন ঈশ্বরের রূপ মূর্তি বা ছবি হিসেবে সামনে থাকলে প্রার্থনায় মন বসানো যায়।
ঈশ্বরকে সহজে কল্পনা করা যায়।
ভগবানের অস্তিত্ব উপলব্ধি করা যায়।
যেমন,ক্লাসে সমগ্র বিশ্বকে বুঝাতে ম্যাপ বা গ্লোব ব্যবহার হয়।এতে ছাত্রছাত্রীরা সহজে বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারে।
ঠিক তেমনি মূর্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের রূপকে সহজে বুঝানো হয়।
একটা ম্যাপ বা গ্লোব মানে যেমন সমগ্র পৃথিবী না,তেমনি মূর্তি মানেই হিন্দুদের ভগবান না।
আমি জানলাম,
বেদে,গীতায় আল্লাহ,নবীর কথা লিখা নেই।
উত্তরায়ণ বেদ আর অল্লোপনিষদ নামে কোন বেদ,উপনিষদ নেই।এগুলো হিন্দুদের বিভ্রান্ত করার জন্য,বোকা বানানোর জন্য সম্রাট আকবরের সময় লিখা হয়েছিলো।
আমি জানলাম,
হিন্দুধর্মে মূর্তিপূজা নিষেধ না। মূর্তিপূজা নিষেধ বলে যে মন্ত্র বলা হয় এগুলো বিকৃত অর্থে প্রচারিত।
 
(যজুর্বেদ ৪০/৯)
অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যেহ সংভূতি মুপাস্তে।
ততো ভুয় ইব তে তমো য অসম্ভুত্যাঃ রতাঃ।।
✍️সরলার্থঃ যারা সকামকর্ম(অর্থাৎ ফলের আশায় কাজ করা,স্বার্থপরতা,লোভ ইত্যাদি) আসক্ত হয় তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে এবং যারা "অসম্ভুত্যাং" অর্থাৎ বিধ্বংসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয় তারা আরো অন্ধকারে প্রবেশ করেন।
✍️এখানে,
**প্রবিশ্যন্তি- প্রবেশ করে
**সম্ভুতি- সকাম কর্ম
**মু উপাস্তে- সংযুক্ত হওয়া
**রত্যাঃ- আসক্ত হওয়া
👉বিকৃত অর্থ - প্রকৃতির পূজা করলে অন্ধকারে নরকে যাবে,আর কার্যব্রহ্মে মানে মাটি দিয়ে কিছু বানানো, একদম স্পষ্ট, একদম স্পষ্ট ভাবে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ!
 
(যজুর্বেদ ৩২/৩)
ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ্ যশঃ।
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা যস্মান্ন জাত ইত্যেষঃ।।
✍️এখানে যে প্রতিমা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তা সংস্কৃত শব্দ প্রতিম এর সাথে 'আ' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে। প্রতিম শব্দের অর্থ তুল্য বা সমতুল্য।
এখানে এর সরলার্থ করলে হবে নিরাকার ব্রহ্মের সমতুল্য কেউ নেই।
কিন্তু এখানে ও বলা নেই যে দেব-দেবীর পূজা করা যাবে না। কারণ দেব-দেবী ঈশ্বরেরই সাকার রূপ।
👉ভূল ব্যাখ্যাঃ-তারা এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে এবং তারা যে লাইন ব্যবহার করে তা নিম্নরুপঃ
"ন তস্য প্রতিমা অস্থি"
এবং তাদের কথা হচ্ছে যেহেতু প্রতিমা অর্থ ইংরেজিতে sculpture, icon etc. তাই এখানে বলা হয়েছে ঈশ্বরের কোনো প্রতিমা নেই। যা সম্পূর্ণ ভুলভাবে তারা উপস্থাপন করে থাকে। যদি তাদের এই ব্যবহার করা মাত্র দুইলাইন শব্দ নিই সম্পূর্ণ মন্ত্র থেকে
👉"ন তস্য প্রতিমা অস্থি"
তদাপি এখানে তাদের ব্যাখ্যা কোনোভাবেই আসে না। এখানে এর সরলার্থ হয় ঈশ্বরের সমতুল্য কেউ নেই। কিন্তু তার সাকার রূপকে দেব-দেবী মেনে পূজা নিষিদ্ধ এটা কোথাও নেই৷ 
 
আমি জানলাম,
হিন্দুরা মৃতদেহ জ্বালায় কারণ,হিন্দু শাস্ত্রমতে মৃতদেহ প্রকৃতির পঞ্চভূত(পাঁচটি জিনিসে) তৈরী।তাই মৃতদেহকে এই পঞ্চভূতে মেশানোর উদ্দেশ্যেই জ্বালিয়ে ভস্ম নদীতে ফেলা হয়।তবে মুখাগ্নি করে মৃতদেহ মাটিতে সমাধি করারও বিধান আছে।
আর মৃতদেহের কোন অনুভূতি নেই।পুড়ালে যা,মাটিতে দিলেও তা।
তাই পুড়িয়ে আগুনে মেশানোকে অমানবিক আর মাটিতে পঁচিয়ে,দুর্গন্ধযুক্ত করে মেশানোকে মানবিক বলা যাবে না।দুটোই সমান।
আমি জানলাম,
বেদে গোহত্যা, গোমাংস খাওয়া নিষেধ।তাই হিন্দুরা গোমাংস খায় না।গোহত্যা করে না।
আমি জানলাম,
হিন্দুদের জীবনের মূল লক্ষ্য মোক্ষ লাভ বা মুক্তি লাভ।সুখ দূঃখের উর্দ্ধে উঠে পরমাত্মা(ঈশ্বরের) কাছে যাওয়া।ঈশ্বর লাভ করা।
আমি তো বেদ,গীতা,উপনিষদ পড়ে জেনে গেলাম!!
বেঁচে গেলাম অধঃপতনের হাত থেকে!!
কিন্তু বাকি হিন্দুরা??
আসুন, সনাতনী হিন্দু ভাইবোনেরা নিজেরা ধর্মজ্ঞান অর্জন করি।বাচ্চাদের শিখাই।আর কোন হিন্দু যেনো জ্ঞানপাপী না হয়।
স্বর্গের লোভ নয়,নয় নরকের ভয়।
সৃষ্টিকর্তাকে ভয় নয়,ভালোবাসুন।
আসুন মুক্তির পথে সত্য,শান্তি,সুন্দর সনাতন
 
 
 লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়া হতে  সংগ্রহীত

 

No comments: